সোমবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২১, ০৪:৪০ পূর্বাহ্ন
পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু একটি বড় সামাজিক সংকট হয়ে দেখা দিয়েছে। বন্যার প্রকোপ দেখা দিলে এই মৃত্যুহার কয়েকগুণ বেড়ে যায়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, বছরে প্রায় ১৯ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে প্রতিদিন গড়ে ৫৩ জন শিশু-কিশোর পানিতে ডুবে প্রাণ হারাচ্ছে। চলমান বন্যায় এ সংখ্যা আরও বেড়েছে। ইতোমধ্যে চলমান বন্যায় দেশের ৩৩ জেলায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩৩। পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর একটি বড় কারণ সাঁতার না জানা। নদীমাতৃক দেশ হলেও আমাদের অধিকাংশ শিশুই সাঁতার জানে না। একদিকে পারিবারিকভাবে শিশু-কিশোরদের সাঁতার শেখানো হয় না, অন্যদিকে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়েও এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেই। অথচ বিশেষত বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলোয় শিশু-কিশোরদের সাঁতার জানাটা অতি জরুরি। আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনিসেফ বাংলাদেশ কর্তৃক বন্যাপ্রবণ এলাকায় শিশু-কিশোরদের সাঁতার শেখানোর একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বেশ কয়েক বছর ধরে এ প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে।
দেশে যেহেতু বন্যা ফি বাৎসরিক দুর্যোগ হয়ে দেখা দেয়, সেহেতু শিশু-কিশোররা যাতে পানিতে ডুবে মারা না যায়, সে ব্যাপারে জনসচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। বস্তুত, গ্রামীণ জনপদের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ব্যাপারে খুব একটা মনোযোগী নন। শিশু-কিশোরদের সাঁতার শেখানো যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ, তা তারা বোঝেন না। পানিতে ডুবে মারা যাওয়া নিশ্চয়ই প্রতিরোধযোগ্য দুর্ঘটনা। শিশুরা যাতে পানির কাছাকাছি যেতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। আমরা মনে করি, পানিতে ডুবে শিশু-কিশোরদের মৃত্যু রোধে সরকারের পক্ষ থেকে বড় ধরনের প্রচারাভিযান চালানো দরকার। বেসরকারি সংস্থাগুলোরও এ ব্যাপারে দায়িত্ব রয়েছে। দ্বিতীয়ত, বন্ধ হয়ে যাওয়া ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রকল্পটিও চালু করা দরকার। এ সংস্থার কমিউনিকেশন কর্মকর্তা পানিতে ডুবে শিশু-কিশোরের মৃত্যুর ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে শুধু উদ্বেগ প্রকাশ করলেই হবে না, এটা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। বাংলাদেশে শুধু পানিতে ডুবে নয়, বজ্রপাত ও সাপের কামড়েও শিশু-কিশোরদের মৃত্যু হচ্ছে। এসব অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু রোধে বিশেষত অভিভাবক মহলের সতর্ক দৃষ্টি প্রয়োজন।