রবিবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২১, ১২:২০ পূর্বাহ্ন
কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি॥ পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার খাদ্য বান্ধব কর্মসুচীর হতদরিদ্র পরিবার, ভূমিহীন, দিনমজুর, উপার্জনে অক্ষম ব্যক্তিদের ১০টাকা কেজি চালের রেশন কার্ডের তালিকায় ব্যাপক অনিয়ম পাওয়া গেছে। এবার কোটিপতি পেলেন রেশন কার্ড। এনিয়ে চলছে তোলপাড়।
কলাপাড়ায় রেশন কার্ড বিতরণে অনিয়ম যেন পিছু ছাড়ছেনা অস্বচ্ছল পরিবারের জন্য দেয়া সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীতে। স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের যোগসাজসে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর ডিলার হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় প্রায় চার হাজার ভুয়া কার্ডের চাল দীর্ঘদিন ধরে কালো বাজারে বিক্রীর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এনিয়ে গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর ওই চার হাজার ভুয়া কার্ড বাতিল করে স্থানীয় প্রশাসন। তবে এ বিষয়ে অভিযুক্তদের বিষয়ে কোন আইনী পদক্ষেপ নেয়া হবে কিনা তা স্পষ্ট করেনি প্রশাসন।
উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর প্রায় তিন হাজার আট শ’ ২৪ কার্ড বাতিল করে নতুন কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। সরকারের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ২০ হাজার ১৫৩ কার্ডধারী সুবিধাভোগীর মধ্যে প্রায় চার হাজার ভুয়া কার্ড তৈরির মাধ্যমে ডিলারসহ জনপ্রতনিধিদের বিরুদ্ধে চাল আতœসাতের খবর বিভিন্ন গনমাধ্যম প্রকাশের পর উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এ সংক্রান্ত কমিটি যাচাই বাছাইয়ের নির্দেশ দিলে এ পরিমাণ কার্ড সংশোধন করা হয়েছে। অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের লক্ষ্যে সংশোধিত তালিকা সব ইউনিয়নের ডিলারের কার্যালয়ে এবং ইউনিয়ন পরিষদে টানিয়ে দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর পরেও বর্তমান তালিকায় আরও শতকরা কমপক্ষে ১০ ভাগ নাম রয়েছে যারা সচ্ছল, বিত্তশালী, মেম্বর, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী।
এর আগে হাজারো ব্যক্তির নাম মিলেছে যারা নিজেরাই জানেন না তাদের নাম খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির তালিকায় রয়েছে। তিন সহস্রাধিক ভুয়া নামের চাল ডিলাররা খাদ্য গুদাম থেকে উত্তোলন করে দীর্ঘদিন যাবৎ কালো বাজারে বিক্রী করে অনেকটা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে।
খাদ্য অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, উপজেলা চাকামইয়া ইউনিয়নের ৩৫৭টি, টিয়াখালীর ৮৭৮টি, লালুয়ায় ৬৩৩টি, মিঠাগঞ্জে ৩৭৪টি, নীলগঞ্জে ৩৫২টি, মহিপুরে ৯৬টি, লতাচাপলী ২৪৯টি, ধানখালীতে ১২৯টি, ধুলাসারে ৩১টি, বালিয়াতলী ২৪৬টি, ডালবুগঞ্জ ২৫৯টি এবং চম্পাপুরে ২২০টি কার্ড সংশোধন করা হয়েছে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর এ কার্ডধারীরা বছরের মার্চ, এপ্রিল ও সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর পাঁচ মাসে ১০ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে চাল নির্দিষ্ট ডিলারদের কাছ থেকে ক্রয়ের সুবিধা পাচ্ছেন। সরকারি নির্দেশনা রয়েছে গ্রামে বসবাসরত সবচেয়ে হতদরিদ্র পরিবার, ভূমিহীন, কৃষি শ্রমিক, দিনমজুর, উপার্জনে অক্ষম, বিধবা/তালাকপ্রাপ্তা/স্বামী পরিত্যাক্তা/অসচ্ছ্বল বয়স্ক নারী প্রধান পরিবার এবং যেসব দুঃস্থ পরিবারে শিশু বা প্রতিবন্ধী রয়েছে তারা এ তালিকায় অগ্রাধিকার পাবেন।
কিন্তু অধিকাংশ কার্ডধারীর বাস্বব চিত্র ভিন্ন। এছাড়া একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তিকে তালিকাভুক্ত করা যাবেনা। ভিজিডি, ভিজিএফ সহ সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধাপ্রাপ্তদের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা যাবে না। কিন্তু এসব তালিকায় সরকারি নির্দেশনা না মেনে জনপ্রতিনিধিরা ডিলারদের হট কানেকশনে তাদের পছন্দসই ব্যক্তিকে তালিকাভুক্ত করে ফেয়ার প্রাইস কার্ডভুক্ত করেছেন। প্রভাবশালী, অবস্থা সম্পন্ন পরিবারের একাধিক বক্তির নামও রয়েছে এ তালিকা। কিন্তু এসব তালিকায় সরকারী নির্দেশনা না মেনে জনপ্রতিনিধিরা কোটিপতি ব্যক্তিকে ও তাদের পছন্দসই ব্যক্তিকে তালিকাভুক্ত করে ফেয়ারপ্রাইস কার্ডভুক্ত করেছেন।
বিভিন্ন ইউনিয়নে মানুষের অভিযোগ ডিলাররা মুখ দেখে খাদিম দিচ্ছে। হতদরিদ্র পরিবার, ভূমিহীন, কৃষি শ্রমিক, দিনমজুর পরিবার গুলো প্রকৃত ভাবে তারা পায় না। যারা সচ্ছল, বিত্তশালী, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী তাদেরকে দেয়া হচ্ছে ওই কার্ড।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, প্রত্যেক ডিলার চাল বিতরণের সময় তদারকি কর্মকর্তা রয়েছে।