রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:৫০ পূর্বাহ্ন
বি নিউজ : টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে মানবসম্পদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বেশি বিনিয়োগ করতে বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। আজ মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের জেনিভায় জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার (আঙ্কটাড) বিশ্ব বিনিয়োগ সম্মেলনে তিনি বলেন, মানবসম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে শিক্ষা এবং দক্ষতা বৃদ্ধিতে আমাদের বেশি বেশি বিনিয়োগ করতে হবে। এর মাধ্যমেই আমরা ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজেদের প্রস্তুত রাখতে পারব। জেনিভায় জাতিসংঘ দপ্তরে চার দিনের এ সম্মেলনে বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান, মন্ত্রী, বিনিয়োগকারী, সরকারি কর্মকর্তা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার কয়েক হাজার প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ ও উন্নয়ন সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা এবং এ বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নের একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈশ্বিক ফোরাম হচ্ছে বিশ্ব বিনিয়োগ সম্মেলন। এ বছর এ সম্মেলনের এক দশক পূর্ণ হচ্ছে, এবারের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে ‘টেকসই উন্নয়নে বিনিয়োগ’। বিশ্বায়নের নেতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরে আবদুল হামিদ সম্মেলনে বলেন, বিশ্বায়ন নতুন কোনো বিষয় না হলেও এর নেতিবাচক প্রভাবগুলো দেখা যাচ্ছে। শিল্পবিপ্লব এবং বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন বছরের পর বছর ধরে এই প্রভাবকে বাড়াচ্ছে। বিংশ শতাব্দীতে নজিরবিহীন প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং যোগাযোগের ওপর এর প্রভাব পণ্য ও সেবার স্থানান্তরে বিপ্লব আনলেও সম্পদের সুফল প্রত্যেক মানুষের কাছে সমানভাবে পৌঁছেনি। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারে উৎপাদনে খরচ কমে গেছে। এর ফলে বিভিন্ন দেশের কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় বিশ্বায়নের প্রতি মানুষের অবিশ্বাস এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের প্রতি বৈরিভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। কীভাবে এ সমস্যার সমাধান করা যায় সে বিষয়গুলো বিনিয়োগ নীতিমালা তৈরিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যাতে আরও বেশি মানুষ বিশ্বায়নের সুফল পেতে পারে। বিনিয়োগের সুফল তুলে ধরে সম্মেলনের ‘গ্লোবাল লিডারস ইনভেস্টমেন্ট সামিটে’ রাষ্ট্রপতি বলেন, বিনিয়োগ সরসারি দেশীয় ব্যায় বৃদ্ধি করে এবং অর্থের প্রবাহ বাড়ায়, আধুনিকতা আনে এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে। বৈদেশিক বিনিয়োগ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় নতুন নতুন উদ্ভাবন আনে। প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করে এবং বিশ্ব বাজারে প্রবেশে সহায়তা করে। উন্নয়ন দেশগুলোতে বিনিয়োগ কম হওয়ার কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, টেকসই উন্নয়নের বিষয়টি না ভেবেই যেখাতে দ্রুত মুনাফার সুযোগ আছে বিনিয়োগ সেখানে বেশি হচ্ছে। উন্নয়নশীল ও স্বল্প উন্নত দেশগুলোতে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং যোগাযোগসহ প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা না থাকায় বিদেশি বিনিয়োগ পাচ্ছে না। আঙ্কটাডের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, বৈশ্বিক জিডিপির বৃদ্ধির হার অব্যাহত থাকলেও উৎপাদনের হার কমছে এবং ‘ভ্যালু চেইন’এর প্রবৃদ্ধি স্থবির হয়ে আছে। এ কারণে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ আছে। বিনিয়োগ বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, রপ্তানির বহুমুখীকরণ, কার্যকর বিনিয়োগ নীতি, আর্থিক প্রণোদনা, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো অভ্যন্তরীণ ও সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয়। বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য বিরোধ নিষ্পত্তির বাস্তবসম্মত আইনি কাঠামো তৈরির ওপরও জোর দেন রাষ্ট্রপতি। তিনি টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে প্রণোদনা ও অগ্রাধিকার দিয়ে নবায়নযোগ্য জ¦ালানি খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করার কথা বলেন। আবদুল হামিদ বলেন, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় সমতা আনতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ক্ষেত্রে সহায়তা করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও এ সময় তিনি তুলে ধরেন। পরে প্রশ্নোত্তরপর্বে রাষ্ট্রপতি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, স্বল্পন্নোত দেশগুলোর উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে উন্নত দেশগুলোর সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি বিশ্ব বাজারে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার অব্যাহত রাখার ওপরও জোর দেন। অন্যদের মধ্যে মঙ্গোলিয়ার প্রেসিডেন্ট খালৎমা বাটুলগা, মন্টেনিগ্রোর প্রেসিডেন্ট মিলো ডুকানোভিচ, নোভারটিসের প্রধান নির্বাহী বসন্ত নরসিমহান এবং নেসলের চেয়ারম্যান পল বুলকি, আঙ্কটাডের সেক্রেটারি জেনারেল মুখিসা কিতুভাই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। বিনিয়োগ ও উন্নয়ন এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত দুটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে পাঁচ দিনের সফরে সুইজারল্যান্ডের জেনিভায় পৌঁছান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। গত সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা পৌনে ৮টায় জেনিভা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (কোয়েঁত্রাঁ বিমান বন্দর) পৌঁছান রাষ্ট্রপতি। বিমানবন্দরে রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানান সুইজারল্যান্ডে জাতিসংঘ দপ্তরে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মো. শামীম আহসান। বিমান বন্দর থেকে রাষ্ট্রপতি গ্রান্ড হোটেল কেম্পনিস্কিতে যান। জেনিভা সফরে এই হোটেলেই থাকবেন তিনি। রোববার ভোররাতে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে জেনিভার উদ্দেশে ঢাকা চেড়েছিলেন রাষ্ট্রপতি। পথে দুবাইতে যাত্রাবিরতি দেন তিনি। এই সফরে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার (আঙ্কটাড) বিশ্ব বিনিয়োগ সম্মেলন এবং ক্রানস মনটানা ফোরাম আয়োজিত ‘হোমল্যান্ড অ্যান্ড গ্লোবাল সিকিউরিটি ফোরামের’ বিংশতম সম্মেলনে বক্তব্য দেবেন রাষ্ট্রপতি। ‘টেকসই উন্নয়নে বিনিয়োগ’- এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে ২২ থেকে ২৬ অক্টোবর জেনিভায় জাতিসংঘ দপ্তরে অনুষ্ঠেয় বিনিয়োগ সম্মেলনে বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান, মন্ত্রী, বিনিয়োগকারী, সরকারি কর্মকর্তা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ ও উন্নয়ন সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা এবং এ বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নের একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈশ্বিক ফোরাম হচ্ছে বিশ্ব বিনিয়োগ সম্মেলন। এ বছর এ সম্মেলনের এক দশক পূর্ণ হচ্ছে। বিশ্বায়ন ও শিল্পায়নের নতুন যুগে বৈশ্বিক বিনিয়োগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় করণীয় বিষয়ে এ সম্মেলনে আলোচনা হবে বলে আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আর ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত জেনিভা ভিত্তিক ক্রানস মনটানা ফোরাম জাতিসংঘ, ন্যাটোসহ বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা বিষয়ে কাজ করে। বৈশ্বিক নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণে ‘হোমল্যান্ড অ্যান্ড গ্লোবাল সিকিউরিটি ফোরামে’ আলোচনা হবে। ফোরামের এবারের সম্মেলনে আবদুল হামিদসহ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। দুটি সম্মেলন শেষে আগামি ২৭ তারিখ আবদুল হামিদের দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
Leave a Reply